বিদেশ যাওয়ার প্রভোলনে টাকা দিয়ে আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়ে ৪ যুবক স্বর্বশান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। মামলা করেও প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কোটচাঁদপুরের আকিমুল ও তাঁর পরিবার। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ব্যাংক লোন, জমি আর হালের বলদ বিক্রির টাকা আদম ব্যাপারিকে দিয়ে বিদেশে গিয়ে ছিলেন চার যুবক। এদের মধ্যে তিন জন দেশে ফিরতে পারলেও টাকার অভাবে বাড়িতে ফিরতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন একরামুল। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কোটচাঁদপুরের আকিমুল ইসলাম ও তাঁর পরিবার।
জানা গেছে, আদম ব্যাপারি রুস্তমকে দিয়ে মালয়েশিয়া গিয়ে ছিলেন চার যুবক। এর মধ্যে রয়েছে কোটচাঁদপুরের গোবিন্দপুর গ্রামের নাজমুল ইসলামের ছেলে আকিমুল ইসলাম, একই উপজেলার সোয়াদি গ্রামের মন্ডল পাড়ার আকবর আলীর ছেলে একরামুল হোসেন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর অনন্তপুর গ্রামের এরাদ আলীর ছেলে স্বার্থক আলী, একই উপজেলার বাজদিয়া উত্তর পাড়ার সাঈদ আলীর ছেলে মাহবুর হোসেন। এদের মধ্যে আকিমুল ইসলাম, স্বার্থক আলী ও মাহবুর রহমান কাজ না পেয়ে ৫ মাস পর ট্র্যাভেল ভিসায় দেশে ফিরে আসেন। তবে টাকার অভাবে ফিরতে পারেনি একরামুল হক। আজও বিদেশের মাটিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনরা।
আকিমুল ইসলাম দেশে আসার কিছু দিন পর টাকার জন্য ওই আদম ব্যাপারির বাড়িতে যান। তাতে কোন লাভ না হলে গেল ১০-০৩-২৫ তারিখে আদম ব্যাপারির বিরুদ্ধে কোটচাঁদপুর থানায় অভিযোগ করেন।
ওই সময় আদম ব্যাপারি থানায় গিয়ে টাকা ফেরত দেবার কথা বললেও পরে তা দেননি। এরপর নিরুপায় হয়ে আকিমুল ইসলামের নানী মোছাঃ রাহাতুন বেগম বাদী হয়ে ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে কোটচাঁদপুর থানায ৪ জনের নামে মানব পাচারের মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় রুস্তম আলী, ছেলে আলমগীর হোসেন, জামাই বিপ্লব হোসেন ও মেয়ে রুমি খাতুন কে। এদের প্রত্যেকের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার জীবননগন আন্দুলিয়া গ্রামের মাজদিয়া পাড়ায়। তারা শ্বশুর, জামাই ছেলে আর মেয়ে নিয়ে গড়ে তুলেছেন আদম পাচার সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট শুধু চার যুবকের কাছ থেকে না, এলাকার অনেকের কাছ থেকে বিদেশে ভাল কাজ দেবার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
এদিকে ওই মামলায় ধরা পড়ে জেল খেটেছেন জামাই বিপ্লব হোসেন। তবে অধরা রয়েছে মামলার অন্য আসামিরা। সম্প্রতি জেল থেকে বের হয়েছেন জামাই বিপ্লব হোসেন। হুমকি -ধামকি দিচ্ছেন বাদিকে মামলা তুল নিতে। আর না তুললে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এখন তারা প্রাণ ভযে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আকিমুল ইসলাম বলেন, আদম ব্যাপারি রুস্তম আলী আমাদের আত্মীয় হয়। সেই সুত্রে সে আমার নানি রাহাতুনের কাছে এসে আমার বিদেশে যাবার কথা বলেন। বলেন ভাল কাজ পাবে। আবার বেতন ও ভাল হবে। এ কথা শুনে নানি রাজি হয়ে যায়। সেটা ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস। ওই সময় থেকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করেন। টাকার চুক্তি হয় ৭ লাখ টাকা। যা তিনি ২ কিস্তিতে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন। ওই টাকা দিতে নিতে হয়েছিল ব্যাংক লোন। বিক্রি করতে হয়েছিল জমি আর হালের বলদ। একইভাবে টাকা নেন ওই তিন জনের কাছ থেকে। এরপর ৮-০৫-২০২৪ তারিখে আমাদেরকে মালেশিয়া পাঠান রুস্তম আলী। আমরা মালয়েশিয়া যাবার পর আমাদের কাগজপত্র নিয়ে একটি ঘরে থাকতে দেন। ওই সময় খাবার সব টাকাও নিয়ে রাখেন। আর এভাবে চলে ৫ মাস। এরপরও কোন কাজ দিতে না পারায় আমরা তিন জন বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে ট্র্যাভেল ভিসায় দেমে ফিরে আসি। তবে টাকার অভাবে বাড়িতে ফিরতে পারেনি একরামুল। সে আজও মালয়েশিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, সংসারে সচ্ছলতা আর একটু সুখের আশায় জীবনের সব টাকা দিয়ে আজ আমরা নিঃশ হয়েছি। অন্যদিকে মামলা করেও রয়েছি বিপাকে। পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে প্রাণ ভয়ে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে কথা বলতে আদম ব্যাপারি রুস্তম আলীর মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কথা হয় ওই মামলার আরেক আসামি বিপ্লব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, একটু ঝামেলা আছে। আমি আপনার সঙ্গে পরে ফোন করছি। এরপর তিনি আর কোন যোগাযোগ করেনি। আর কল করলেও ফোন রিসিভ হয়নি। কোটচাঁদপুর থানার উপপরিদর্শক এসআই আশিষ বলেন, ওই মামলায় একটা আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে।
https://slotbet.online/