যশোরের চৌগাছায় বিদেশি কয়েকটি জাতের আঙ্গুর চাষ করে কৃষক রুহুল আমিন চমক সৃষ্টি করেছেন। চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে মিষ্টি লাল আঙ্গুর চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছে ব্যাপক ফল এসেছে। তবে শিলা বৃষ্টিতে তার আঙ্গুরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তারপরও এই কৃষক আঙ্গুর বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পৌর এলাকার বেলের মাঠ গ্রামের মঈনুদ্দিনের ছেলে কৃষক রুহুল আমিন (৩০)। কৃষি কাজেই তার সংসারের চাকা সচল থাকে। ২০২৩ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক তথা সোস্যাল মিডিয়াতে আঙ্গুরের চাষ দেখে মনস্থির করেন তিনি নিজেই চৌগাছার মাটিতে আঙ্গুর চাষ করবেন। যে ইচ্ছা সেই কাজ। ১০ কাটা জমিতে আঙ্গুর চাষ করেন। তবে সঠিক জাত নির্বাচিত করতে না পারায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হয় তার। কিন্তু হাল ছাড়েননি অদম্য পরিশ্রমি কৃষক রুহুল আমিন। ওই গাছ ক্ষেত থেকে উজাড় করে নতুন বেশ কয়েকটি জাতের আঙ্গুরের চারা সংগ্রহ করেন এবং এক বিঘা জমিতে আঙ্গুর গাছের চারা রোপন করেন। এরমধ্যে একোলো বাইকুনুর, ব্লাক ম্যাজিক, সিলভা, দিকছন ও ভেলেন এই চারটি জাত অন্যতম। মুলত এসব আঙ্গুর ইউক্রেন, রাশিয়া অষ্ট্রেলিয়াতে চাষ হয় বলে জানা গেছে। রুহুল আমিন ইউটিউব দেখে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার জুগিহুদা গ্রামের সফল আঙ্গুর চাষি আব্দুর রশিদের নিকট হতে চারা সংগ্রহ করেন এবং এক বিঘা জমিতে লাগান।
গতকাল সরেজমিনে কৃষক রুহুল আমিনের আঙ্গুর ক্ষেতে যেয়ে দেখা যায় পড়ন্ত বিকেলেও তিনি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় কথা হয় রুহুল আমিনের সাথে। তিনি বলেন, সৌখিন চাষ হচ্ছে আঙ্গুর চাষ। চারা রোপনের পর হতে মাচা তৈরী গাছ গুলো মাচাতে তুলে দেয়া সব কিছুতেই এক ধরনের শৈল্পিকতা বিরাজ করে। আমি ২০২৩ সালে আঙ্গুর চাষ করেছিলাম কিন্তু না বুঝে চাষ করায় বেশ ক্ষতির সম্মুখিন হই। তবে এবছর যে আঙ্গুর চাষ করেছি এটিই হচ্ছে প্রকৃত আঙ্গুর। এর রং, স্বাদ এবং দেখতে দৃষ্টিনন্দন। এবছরই প্রথম নতুন জাতের গাছে ফল এসেছে। প্রচুর পরিমাণে আঙ্গুর ধরেছিল কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। একদিনে শিলায় আমার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। তারপরও যে পরিমাণ আঙ্গুর এখনো গাছে আছে তাতে আশানুরুপ টাকা হবে বলে মনে করছি। রোববার একজন ব্যাপারী এসে ১০ কেজি আঙ্গুর নিয়ে গেছে। আমি পাইকারি ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। এই আঙ্গুর খুব মিষ্টি, তবে ভিতরে ছোট বিচি আছে, আগামীতে এগুলো থাকবে না তারজন্য নতুন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
কৃষক রুহুল আমিন আরও বলেন, বিদেশি এই জাতের চারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যার কারণে আমি চারা তৈরীর কাজ শুরু করেছি। একটি চারা ৩শ হতে সাড়ে ৪শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে এই চারা তৈরী করতে সকলেই পারেনা। আমি একবার ভারতের দুইজন পারদর্শী এনে চারা তৈরী করেছি। ওদের নিকট হতে শিখে রাখার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা সাহায্য করেনি। তবে মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই আমি পারবো এমনটিই মনে হচ্ছে। রুহুল আমিনের পরামর্শ চাকরির পেছনে না ছুটে, লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদেশ না যেয়ে ওই টাকা নিজের দেশে খাটালে প্রত্যেকের স্বাবলম্বি হতে বেশি সময় লাগবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষক আঙ্গুর চাষে মনোযোগী হয়েছেন, আমাদের চৌগাছাতেও এর সংখ্যা নেহায়েত কম না। তবে বিগত বছর গুলোতে কৃষক আঙ্গুর নামে যে ফলের চাষ করেছেন সেটি ছিলো মনোক্কা, যা খুবই টক ফলে চাষি ক্ষতির সম্মুখিন হন। এবার তারা সঠিক জাত নির্বাচন করেছেন এবং আমি আসাবাদি তারা ব্যাপক লাভবান হবেন। কৃষি বিভাগ সর্বদা চাষিদের সহযোগীতা করে যাচ্ছে।