নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এক সময় যশোর অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে মাঠে-ঘাটে, জমির আইলের ধারে রুপসী বাংলা অন্যতম ঐতিহ্য “খেজুর গাছ এর দেখা মিললেও কালের আবর্তে আজ তা বিলুপ্ত প্রায়। প্রবাদ বাক্যেও প্রচলন রয়েছে যশোরের যশ.. খেজুরের রস। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যশোর অঞ্চলে এখন আর সচরাচর খেজুর গাছের দেখা মেলে না। কারন বিভিন্ন শিল্পকারখানার জ্বালানির খোরাক হিসাবে চাহিদার প্রথমে রয়েছে এই খেজুর গাছ। এরফলে নির্বিচারে গাছ কাটা, প্রাকৃতিক কারণ, পরিবেশ দুষণ, আবাদি জমিতে বসতভিটা সহ নানা কারণে গ্রামঞ্চলের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন খেজুর গাছ এখন যেন বিলুপ্তির দোরগোড়ায়।
যশোর সদরের প্রত্যন্ত গ্রাম হাটবিলা, রূপদিয়া, মালিডাঙ্গা, মথুরাপুর, দেয়াপাড়া, ঘুনি, নরেন্দ্রপুর, খাটরা-বলরামপুরাসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসকল অঞ্চলে প্রত্যেহ শীতের সকালে গাছিরা খেজুর গাছকে বিশেষ কায়দায় ছাল তুলে রস সংগ্রহের উপযোগী করে তোলেন। পরে সেখানে মাটির ঠিলে/ভাড় বা হাড়ি বসিয়ে গাছ থেকে মিষ্টিগন্ধের সুস্বাদু রস সংগ্রহ করে। তারপর ওই রস বড়পাত্রে করে আগুনে জালিয়ে মনমাতানো স্বাদের খেজুরের গুড়-পাটালি তৈরি করে তা স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করত হরদম। পিঠা-পায়েস তৈরিতে কেউ বা কিনে নিতেন কাঁচা রস। দুরান্ত ও দুষ্টু ছেলেপেলে’দের হাত থেকে গাছের রস রক্ষায় রাত জেগে গাছ পাহারা দিতেন গাছিরা। পুরো শীত মৌসুম জুড়েই দেখা মিলত এক উৎসবের আমেজ।
এখন শীত মৌসুম এলেও দেখা মেলেনা গাছিদের সেই কর্মব্যস্ততা। স্থানীয় মুরুব্বিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব এলাকায় এক সময় প্রচুর খেজুর গাছ ছিলো। তাই গাছির সংখ্যাও ছিলো অনেক। এখন নির্বিচারে নানা কারনে খেজুর গাছ কেটে ফেলায় কারনে এই গাছির সংখ্যাও কমে গেছে বহুগুণ।
গাছি আব্দুল জলিল খান বলেন, বহু বছর ধরে খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছি, আগে প্রচুর পরিমাণে রস সংগ্রহ করতাম। পুরো শীতের মৌসুম কাটতো খেজুর গাছ নিয়ে। এখন সারা অঞ্চল জুড়ে মাত্র ২০-২৫ টি গাছ নিয়েই আছি। খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্বেও গাছ না থাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন কলকারখানার মালিকেরা খেজুর গাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে, অনেকে বেশি টাকার আশায় অনেকেই বিক্রি করে দিচ্ছে গৃহস্থরা। আবার অনেক সময় অজ্ঞাত কারণে গাছের মাথা শুকিয়ে মারাও যাচ্ছে।
অত্রাঞ্চলের সব থেকে বেশি খেজুর গাছের এলাকা যশোর সদরের কচুয়া ইউপির মথুরাপুর গ্রামে। সে গ্রামের বাসিন্দা ইসরাফিল বলেন কয়েক বছর আগেও যে দিকে তাকাতাম সে দিকেই ছিলো খেজুর গাছ। শীতের দিনে তো গাছে গাছে থাকত মাটির ঠিলে ঝুলানো। গাছ তোলার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন গাছিরা। রস বিক্রি আর গুড় তৈরির ধুম পড়ে যেতো পুরো গ্রাম এলাকায়। রসের জন্য মানুষের সিরিয়াল পড়তো। কিন্তু এখন আর সেই চিত্র নেই। নানা কারণে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, সামন্য কিছু গাছ থাকলেও আগের মত রস সংগ্রহের সেই ধুম নেই বললে চলে।
বিশেষ ব্যক্তিদের মতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য “খেজুর গাছ একদিকে যেমন গ্রামের শোভা বর্ধন করে অন্যদিকে মুখরোচক খাবার, রসও পাওয়া যায়। এখনই যদি খেজুর গাছ রণাবেণ ও নতুন করে গাছ রোপণ করা না হয় তাহলে অচিরেই বিলুপ্তী হয়ে যাবে খেজুর গাছ।
https://slotbet.online/