একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ তুলে বলেন, বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রেস থেকে না ছাপিয়ে অধিক লাভের আশায় বশীভূত হয়ে নিজেরাই প্রশ্নপত্র ছাপিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান এর দূর্নীতির কারনে ভুল প্রশ্ন পত্র তৈরির জের ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রশ্নপত্রে ভুল থাকার কারণে রীতিমতো এখন ক্ষুব্ধ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া অধিকাংশ অভিভাবকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান এর উপর ক্ষোভে ফুসে উঠেছেন।
এদিকে, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবত প্রধান শিক্ষক পদ শুন্য থাকায় ত্বদীয় স্থলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছে আনিছুর রহমান। আনিছুর রহমান এর মূল পদ সিনিয়র শিক্ষক। জানা গেছে, তিনি একাধারে সহকারী প্রধান শিক্ষককের (চলতি দায়িত্ব) পালন করছেন আবার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় আনিছুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করছেন। ফলে একসাথে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট হিমসিম খেতে হচ্ছে আনিছুর রহমান কে। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ধারাবাহিকতায় যথেষ্ঠ বিঘ্ন ঘটছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৫ জনের বেশি সিনিয়র শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এমতাবস্থায় আনিছুর রহমান একজন সিনিয়র শিক্ষক এবং তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকরা তার নির্দেশনা আন্তরিকভাবে পালন করতে পারছেন না। সে কারণে বিদ্যালয়ের চেইন অফ কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মর্নিং শিফটের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, ইংরেজী প্রশ্নের ৭ দাগের একটা লাইন ব্লাঙ্ক ছিলো। এছাড়া ৪ দাগের কবিতা অংশের প্রথম প্রশ্নটাও ভুল, প্যাসেজ’র বানানও ভুল ছিলো। সেকারণে প্রশ্নের উত্তর লিখতে তাদের যথেষ্ট হিমসিম খেতে হয়েছে। প্রশ্নপত্রে ভুল থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, বাংলা পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে দৃশ্যপট ভুল, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাসের প্রশ্নপত্রেও অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট যাকে দিয়ে প্রশ্ন পত্র টাইপ করা হয়েছে তার মেয়ে ঐ বিদ্যালয়ের প্রভাতী শাখার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। নবম শ্রেণির গণিত প্রশ্নপত্রেও একাধিক ভুল আছে। এছাড়াও দাগ নম্বর ভুল থাকার পাশাপাশি ভগ্নাংশের চিহ্ন ও ভুল। আর এসব ভুলে ভরা প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বার্ষিক পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীরা ভুল প্রশ্নপত্রের বিপরীতে খাতায় উত্তর লিখতে দ্বিধা দণ্ড ভোগের পাশাপাশি মুল্যবান সময় নষ্ট এবং যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া এসব ভুলে ভরা প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
জনমনে এখন প্রশ্ন এসব দায়ভার কার? সচেতন মহল সহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের অভিমত সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র তৈরির দায়ভার স্কুল কর্তৃপক্ষের। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। অপরদিকে এসব নানাবিধ সমস্যা সমাধানে বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবত শুন্য থাকা প্রধান শিক্ষক পদে একজন দায়িত্বশীল প্রধান শিক্ষক জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক, শিক্ষার্থী, সচেতন মহল সহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা।
এ বিষয় সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, প্রশ্নপত্রে ভুল থাকায় পরীক্ষার সময় সংশোধন করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ফটোকপি করিনি প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে। প্রশ্ন পত্রে ভুলের কারনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও রেজাল্ট নিয়ে দ্বিধা দণ্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি স্পেশাল ভাবে স্কুলে এসে দেখা করেন। দূর থেকে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। প্রশ্নপত্র ভুল দায়ভার কার এমন প্রশ্নের প্রতিউত্তরে জবাব না দিয়ে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে তড়িঘড়ি করে আলাপ কলটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এ বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।